কয়েকদিন আগে গত মাসের বিদ্যুৎ বিল হাতে পেলাম। গত মাসের বলতে ২৭ এপ্রিল থেকে ২৭ মে পর্যন্ত। ৫৩০০ টাকা। ভয়ই পেলাম! এতো টাকা হবার কোনোই কারণ নাই, সম্ভাবনাও নাই। ভাবলাম, সারাক্ষণ বাসায় থাকা হয়, লাইট-ফ্যান বেশি চলে, ফলে কিছু বেশি তো আসবেই। তাই বলে একলাফে ৫৩০০ টাকা?
কাদেরাবাদ হাউজিং- এলাকায় থাকি ছয় বছর হলো। এখনকার বাসায় এক বছর ধরে থাকছি। ডিপিডিসি’র গ্রাহক। এরকম অবিশ্বাস্য বিল কখনও আসেনি। বিগত এক বছরের বিল সংগ্রহ করে দেখলাম স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। পত্রপত্রিকায়ও দেখলাম বেশি বিল নিয়ে নিউজ, ফেসবুকেও লেখালেখি হয়েছে। মাননীয় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীও শক্তভাবে বলেছেন, সমস্যার সমাধান করবেন।
সংশ্লিষ্ট দু/একজনের পরামর্শ নিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অনলাইনে অভিযোগ করলাম। এই পেজে https://www.facebook.com/MPEMR/ কিন্তু আত্মবিশ্বাসী হতে পারছিলাম না। কোন তদবির না-করলে ফিডব্যাক পাওয়া যাবে?
MoPEMR থেকে আমার ইমেইলে অভিযোগের আপডেট দেখার জন্য একটা পাসওয়ার্ড দিয়েছিল সঙ্গে সঙ্গেই। এই সন্দেহ থেকেই মন্ত্রণালয় ও ডিপিডিসি-তে ফোনে যোগাযোগ করলাম। সবকিছু শুনে বললেন, চুপচাপ বসে থাকেন। ফিডব্যাক অবশ্যই পাবেন। এদিকে ৩০ জুনের মধ্যে বিল জমা দিতে হবে। দাড়োয়ানকে জিজ্ঞাসা করে খোঁজ নিই, কোন নতুন বিলের কপি এলো কি-না। দাড়োয়ানও জানালো আরও কারও কারও বিল বেশি এসেছে, তাঁরা বিল জমাও দিয়ে দিয়েছে। প্রায় হতাশ অবস্থা আর-কি!
গত ২২ জুন সন্ধ্যায় দাড়োয়ান একটা বিলের কপি দিয়ে গেছেন। ভাবছিলাম পরের মাসের বিল হয়ত! কিন্তু না, আমার আত্মবিশ্বাসহীনতাকে মিথ্যা প্রমাণ করে, আমার সন্দেহকে তীব্রভাবে আঘাত করে সংশোধিত কপি এসেছে। এবার ৪১২৪ টাকা, ১১৭৬ টাকা কমেছে। তবে বিলের কাগজে বর্তমান বিল এবং আগের বিলের সমন্বয়ের কথা উল্লেখ আছে। এটুকু নতুন সংযোজন।
সিদ্ধান্ত নিলাম কালই বিল দিয়ে দেবো। একটা ফিডব্যাক পেয়েছি, বিলও কমেছে। যদিও এবারও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি-ই এসেছে। তবুও ভাবলাম এবার তো বিল দিয়ে দেয়াই উচিত। কিন্তু না, পাল্টা কিছু যুক্তি খুঁজে পেলাম। এখনও বিল বেশি-ই এসেছে, আগে যে ভুল হয়েছিল এটাও সত্য প্রমাণিত হয়েছে এবং অভিযোগ করলে ফিডব্যাক পাওয়া যায়।
এই পয়েন্টগুলোকে সম্বল করে আবারও অভিযোগ করতে বসলাম। এবার ভাবলাম, আগের মতো ফরম পূরণ করে অভিযোগ করবো না, কারণ ৩০ জুনের মধ্যে বিল জমা দিতে হবে। তাই ফোনেই অভিযোগ দেবো। কল করলাম ১৬১১৬ নম্বরে। কাস্টমার নম্বর চেপে গন্তব্যে এগিয়ে গেলাম। প্রত্যাশিত কাউন্টারে উপযুক্ত ব্যক্তিকে পেলাম। জানালো আমার বক্তব্যটি রেকর্ড হবে, এটা আরও ভালো। আমার অভিযোগের আদি-অন্ত বললাম। জরুরি সমাধান চাইলাম। ভদ্রলোক আমার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই অভিযোগ গ্রহণ করলেন। আমার মোবাইলে DPDCINFO থেকে মেসেজ আসার কথা নিশ্চিত হয়ে জানালেন, আগামীকালই ফলাফল জানাবেন। মেসেজে অভিযোগ নম্বরও উল্লেখ ছিল। তিনি ফোন রাখলেন। অভিযোগ-আলাপ শেষ। অপেক্ষার পালা।
আজকে ২৪ জুন সকালেই দাড়োয়ান নতুন বিলের কপি দিয়ে গেল। দেখলাম আগের ৪১২৪ টাকাই বহাল আছে। দ্বিতীয়বার পাঠানো বিলের মতোই কাগজে বর্তমান বিল এবং আগের বিলের সমন্বয়ের কথা উল্লেখ আছে। মনে মনে ভাবলাম দুইবার নিশ্চয়ই ভুল করে নাই কর্তৃপক্ষ।
দ্বিধা নিয়েই ১৬১১৬ নম্বরে ফোন করলাম। আগের মতোই গন্তব্যে পৌঁছে উপযুক্ত ব্যক্তিকে বিস্তারিত বললাম। এবার ভদ্রলোক আমাকে বিশদ বুঝিয়ে বললেন। এর আগে দুই মাসের বিল একসঙ্গে পেয়েছিলাম। সেখানে একটা গড়পড়তা বিল ছিল। তাই কর্তৃপক্ষ আগের বিলের পাওনাটুকু বর্তমান বিলের সঙ্গে সমন্বয় করে দিয়েছেন। এবং এ-ও বললেন, এই সমন্বয় করতে গিয়ে কিছু ভুল হয়েছে, অনেকের বিলের পরিমাণ কম-বেশি হয়েছে। যদিও প্রথম দেয়া বিলের এসবের উল্লেখ ছিলনা, অভিযোগের সময় এটা বলেও নাই। পরের দুইবারের পাঠানো বিলে বিশদে লেখ আছে। আমারও বুঝতে অসুবিধা হয়নি।
এরপরেও অভিযোগ সেন্টার থেকে বললো তাদের www.mpemr.gov.bd/ এই ওয়েবসাইটেও অতিরিক্ত বিলের ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেয়া আছে। আমিও দেখলাম আছে। এবার আমি কনভিন্সড। এর আগে কোন বিষয়ে কখনও কোথাও অভিযোগ করিনি। একদমই নতুন অভিজ্ঞতা। এজন্যই একটু সন্দেহ, কিছুটা আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ছিল। লেখা বাহুল্য, সকল সন্দেহ-শংকাকে মিথ্যা প্রমাণ করে দ্রুততম সময়ে সুফল পেয়েছি এবং ঘরে বসেই।
বঙ্গবন্ধু কন্যার মন্ত্রীসভার চৌকস ও কর্মবীর সদস্য নসরুল হামিদ এমপি। আমাদের প্রিয় বিপু ভাই। বলতে দ্বিধা নাই, উপরোক্ত ঘটনার পরে আর ব্যাখ্যারও প্রয়োজন নাই। বঙ্গবন্ধু কন্যার ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে বিপু ভাইয়ের বিকল্প শুধুই বিপু ভাই। আপনিও অভিযোগ করুন। নিশ্চিত থাকেন সমাধান পাবেন।
বিদ্যুৎ ঘরে ঘরে, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা অনতিদূরে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
লেখক: সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, লেখক ও গবেষক
আর্টিকেলটি নিয়ে মন্তব্য করুন