মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়, ‘সব পেয়েছির দেশ’ বলে। প্রকৃত বাস্তবতা কী বলে? যুক্তরাষ্ট্রের চরম দরিদ্র মানুষের বিষয়ে আমরা কতটুকুই বা জানি? যুক্তরাষ্ট্রেও লাখ লাখ মানুষ প্রকট দারিদ্র্যের মাঝে বসবাস করে। তবে এই বাস্তবতা লুকিয়ে রাখে পশ্চিমা পুঁজিবাদ-নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমগুলো।
কোভিড-১৯ এর প্রভাব পড়েনি এমন কোনো ক্ষেত্র খুঁজে বের করা দুষ্কর। যুক্তরাষ্ট্রও তার ব্যতিক্রম নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত কারো বাৎসরিক আয় ১২,৭৬০ ডলারের কম হলে তাকে দারিদ্র্য সীমার নিচে বলে ধরা হয়। জাতিসংঘের তীব্র দারিদ্র্য ও মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ফিলিপ জি অ্যালস্টনের ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী চার কোটি আমেরিকান দারিদ্র্যের মাঝে বাস করে এবং ১ কোটি ৮৫ লাখ মানুষ তীব্র দারিদ্র্যের মাঝে বাস করে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির উপর কোভিড-১৯ এর প্রভাবের ফলে গরীব মানুষের সংখ্যাটা এখন উর্ধ্বগামী।
২৪/৭ ওয়াল স্ট্রিটের পর্যালোচনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে জুন পর্যন্ত বেকারত্ব সুবিধার জন্য চার কোটিরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট শ্রমশক্তির ২৫ শতাংশ। প্রতি সপ্তাহে নতুন করে প্রায় ১০ লাখ করে এ ধরনের আবেদন জমা পড়ছে। মে মাসে নতুন করে আড়াই লাখ কর্মসংস্থান যুক্ত হওয়ার খবর আসলেও বেকারত্ব বৃদ্ধি থেমে নেই।
এদিকে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা নিয়ে জাতিসংঘের রিপোর্টকে “বাড়িয়ে দেখানো” বলছে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের কনজার্ভেটিভ থিংক ট্যাংক, হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের জরিপ অনুযায়ী ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র আড়াই লক্ষ মানুষ তীব্র দারিদ্র্যের মাঝে ছিলো। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা নিয়ে এ বিতর্কের কারণ হলো, জাতিসংঘ যে প্রক্রিয়ায় জরিপ করেছে তার মাধ্যমে শুধু মানুষের মাথাপিছু আয় ধরা হয়। এর বাইরের প্রভাবকগুলো ধরা হয়না যেমন সরকারি সুযোগ-সুবিধা, ক্রয় ক্ষমতা ইত্যাদি। জাতিসংঘের প্রক্রিয়াটি অধিক প্রচলিত হলেও এসব কারণে অনেকের কাছে এটি গ্রহণযোগ্য নয়।
হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের ২০১৮ সালের জরিপটিতে দেখা যায়, মাত্র ০.০৮ শতাংশ আমেরিকান পরিবার তীব্র দারিদ্র্যের মাঝে রয়েছে যাদের দৈনিক খরচ চার ডলারের কম। এই জরিপটিতে সরকার প্রদত্ত সুযোগ সুবিধা যেমন, চিকিৎসা, খাদ্য, বাসস্থান বিবেচনা করা হয়েছে।
তবে কিছু বিশ্লেষকের মতে হেরিটেজের জরিপে অতিরিক্ত কম সংখ্যা দেখানো হয়েছে। জরিপটির সীমাবদ্ধতা হিসেবে বলা যায়, এটি অনেক পরিবারের খরচ মেটাতে ঋণ নেয়া অথবা ধার-দেনার বিষয়টি উপেক্ষা করে। এছাড়াও, চিকিৎসা, খাদ্য, বাসস্থানের বাইরেও কিছু অপ্রত্যাশিত খরচের দিকটি বিবেচনায় নেয়া হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, জরিপের আরেকটি নেতিবাচক দিক হলো, এটি এমন ভোক্তাদের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে যারা অন্যান্য প্রাপ্ত তথ্য থেকে তুলনামূলক ভিন্ন তথ্য প্রদর্শন করে।
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবীদ অ্যাঙ্গুস ডিটন এর আলাদা একটি গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৫৩ লক্ষ আমেরিকান দৈনিক চার ডলারের কম খরচে বেঁচে থাকে। এই গবেষণায় সরকারি সুযোগ সুবিধাও বিবেচনায় নেয়া হয়। অর্থাৎ, হেরিটেজের দেখানো সংখ্যার থেকে মূল সংখ্যাটা যে অনেক বেশি তা সহজেই ধারণা করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্র সেন্সাস ব্যুরোর পাঁচ বছরের তথ্য ২৪/৭ ওয়াল স্ট্রিটের পর্যালোচনা থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোনো মেট্রোপলিটন অঞ্চলে দারিদ্র্য এতই তীব্র আকার ধারণ করেছে যে এর হার প্রায় ৪০ শতাংশ অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার থেকেও বেশি। এ অবস্থায় করোনার আগ্রাসনের ভয়াবহতা যে পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলবে তা বলাই বাহুল্য।
আর্টিকেলটি নিয়ে মন্তব্য করুন