সিরিয়ার হোমস প্রদেশের একটি সরকারি বিমান ঘাঁটিতে হামলা করে ৬ বছর ধরে চলা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে নাটকীয়ভাবে যুক্ত হয়ে গেলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ৭ এপ্রিল শুক্রবার মধ্যরাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত দুটি মার্কিন নেীবহর থেকে কমপক্ষে ৫৯ টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র সিরিয়ার আল শাইরাত বিমান ঘাঁটিতে আঘাত করে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ এ হামলার নিন্দা জানিয়ে একে ‘আগ্রাসন’ বলেছেন। সিরিয়ার মিত্র রাশিয়ােএ হামলায় ক্ষুব্ধ হয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি সভা আহবান করেছে। খবর মিডিল ইস্ট মনিটর, রাশিয়া টুডে, নিউইয়র্ক টাইমস, প্রেসটিভি।
সিরিয়ার সরকার অনুগত বাহিনী এতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। হামলায় ৬ জন সিরিয়ান বিমান কর্মকর্তা নিহত হন। সিরিয়ার নয়টি বিমান ধ্বংস হয়, কিছু সংরক্ষিত ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমান সংক্রাস্ত খুঁটিনাটি ধ্বংস হয়।
শুক্রবার রাতে হোয়াইট হাউজে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ হামলার কারণ ব্যাখ্যা করেন। বাশার আল আসাদকে সরাসরি ‘স্বৈরাচার’ সম্বোধন করে ট্রাম্প বলেন, বাশার আল আসাদ বাহিনী সিরিয়ার সাধারণ মানুষ এমন কি নিরপরাধ শিশুদের পর্যন্ত হত্যা করতে রাসায়নিক অস্ত্রের হামলা চালিয়েছে। সে কারণেই আজ রাতে আমি যে বিমানঘাঁটি থেকে এই হামলা চালানো হয়েছে তাতে আক্রমণ করার জন্য সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি। ট্রাম্পের এ বক্তব্য বিশ্ব গণমাধ্যমে বারবার প্রচার হচ্ছে কারণ এর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের জটিল সমীকরণের যুদ্ধে ফের সরাসরি যুক্ত হলো। গত মঙ্গলবার সিরিয়ার ইদলিব শহরে ভয়ঙ্কর সারিন গ্যাস দিয়ে তৈরি রাসায়নিক অস্ত্রের হামলা চালায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুসারী সরকারি বাহিনী এই অভিযোগে হামলা চালানো হয় বলে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন নিশ্চিত করেছে। আন্তঃমহাদেশীয় এ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে রণতরী ইউএসএস রস ও ইউএসএস পোর্টার থেকে। হামলার পর সেীদি আরব, ব্রিটেন ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালী ও ন্যাটো আমেরিকাকে প্রকাশ্যে সমর্থন প্রদান করে যেকোন প্রয়োজনে পাশে থাকার ইচছা ব্যক্ত করে।
এ হামলার পর অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাঈলের গণমাধ্যমগুলো উল্লাসে ফেটে পড়ে। ইহুদীবাদ ও ইসরাঈল রাষ্ট্রের বিরোধীতাকারী বাশার আল আসাদের উপর আক্রমণে ইহুদীবাদী ইসরাঈলের জনগণ এ হামলাকে স্বাগত জানিয়ে শত শত টুইট করেছে। ইসরাঈলী গণমাধ্যম যেমন হারেৎজ, টাইমস অব ইসরাঈল, জেরুজালেম পোস্টের অনলাইন সংস্করণে এ হামলাকে প্রশংসার বাণে সাজানো হয়েছে। কিছুদিন আগে সিরিয়ার আকাশ লঙ্ঘন করলে ইসরাঈলী দুটি বিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছিল সিরিয়ার সরকারি বাহিনী। ইসরাঈলী দৈনিক টাইমস অব ইসরাঈলে প্রকাশিত এক নিবন্ধের শিরোনাম করা হয়েছে এমন ‘৫৯ টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে আমেরিকা বিশ্বকে বার্তা দিলো: আমরা ফিরে এসেছি।’
এদিকে রাশিয়ান মিডিয়ার দাবি আমেরিকার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে তেমন কার্যকর নয়। রাশিয়া টুডের মতে, ৫৯ টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র যার মাত্র ২৩ টি সিরিয়ায় পেীঁছে। বাকি ৩৬ টি কোথায় গেছে তা কেউ বলতে পারেনা। তবে এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে স্বাধীন রাষ্ট্র সিরিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র গণমাধ্যমকে বলেছেনম রাশিয়ার উপস্থিতির পরেও যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় আক্রমণ করে ২০১৫ সালে দেশ দুটির মধ্যে সাক্ষরিত সমঝোতা স্মারককে হুমকির মুখে ফেললো।িএ সমঝোতা স্মারকে রাশিয়া ও আমেরিকার সিরিয়ার আকাশ বা স্থলপথে মুখোমুখি না হওয়ার কথা ছিল।
রাশিয়ার বিভিন্ন গণমাধ্যমে সিরিয়ায় অবস্থান করা রাশিয়ান সেনাবাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশের খবর প্রকাশ করা হয়েছে। রাশিয়া টুডের মতে, মার্কিন হামলার পর পরই সিরিয়ায় অবস্থিত সবকটি রাশিয়ান ঘাঁটিতে ক্ষেপনাস্ত্র বিধ্বংসী এস-৪০০ ও এস-৩০০ কে প্রস্তুত রাখা হয় যে কোন হামলাকে প্রতিহত করার জন্য।
অন্যদিকে সিরিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হামলাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোয়ান। তবে তিনি এ হামলাকে যথেষ্ট মনে না করে ‘আরো হামলার আহবান জানান।’ এ হামলার বিষয়ে আরব গণমাধ্যমগুলোতে উচ্ছ্বাস প্রকাশের চিত্র প্রকাশ করা হয়। তবে ইরানীয়ান ও রাশিয়ান গণমাধ্যমে এ হামলাকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আইএসের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হিসেবে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে মার্কিন হামলার পর পরই দায়েশ সন্ত্রাসীরা পালমিরা শহরে আক্রমণ করে পুনর্দখলের চেষ্টা করে।
প্রসঙ্গত, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের পর যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া কখনো এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি। এ দুই পারমানবিক শক্তিধর দেশের হিসেবে সামান্য ভুল হলে বা পরস্পরের প্রতি ক্ষোভ সীমা ছাড়িয়ে গেলে যেকোন সময় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের শঙ্কা।
আর্টিকেলটি নিয়ে মন্তব্য করুন