কেন যাবেন সাজেক ?? ভ্রমনপিয়াসীদের জন্য সাজেক বর্তমানে একটি উল্লেখযোগ্য নাম। খাগড়াছড়ি সদর থেকে মাত্র ৪৫ কিমি দূরে অবস্থিত এই পর্যটন কেন্দ্রটি নি:সন্দেহে পর্যটন শিল্পের জন্য একটি সম্ভাবনাময় দিক। এই পর্যটন শিল্পের ইতিবাচকতা বর্ণনা করে আমি লেখার কলেবর বৃদ্ধি করতে চাই না। “চান্দের গাড়ি” করে যখন আমরা খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদ্দেশ্যে রওনা দেই সদর পার হলেই তখন পাহাড়ী আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে ছুটতে থাকা নিজেকে এক রোমাঞ্চকর পরিবেশে আবিষ্কার করি। সন্দেহ নেই তা কোন ফান রাইডিং রোলারকোস্টার স্মরন করিয়েছিল। এর আগের দিন রাত ১০ টা ৪০ মিনিট নাগাদ রওনা দিয়ে আমরা খাগড়াছড়ি পৌছাই সকাল ৭ টা ৩০ এ। প্রায় নয়টায় রওনা দেই চাঁন্দের গাড়ী খ্যাত ম্যাক্সি টাইপ এক বাহনে চড়ে। ৪৫ কিমি আঁকাবাঁকা এ রাস্তার জায়গায় জায়গায় চেকপোস্ট ও কড়া নিরাপত্তার পুরো বন্দোবস্ত দেখা গেল।
আর বলাই বাহুল্য এ কাজ সেনাবাহিনী ছাড়া আর কারোর নয়। সন্ত্রাসীদের উৎপাত ঠেকাতে পাহাড়ে সেনা কত গুরুত্বপূর্ন তা ঢাকার এসির নিচে বসে তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা কখনোই বুঝবেন না। তাই অনুরোধ করব সাজেক ঘুরে দেখে তারপর বলুন যে, পাহাড়ে সেনার প্রয়োজন নেই! রাজনৈতিক আলাপ আনার জন্য দু:খিত, তবে কোন কিছুই রাজনীতির বাইরে নয়। আর এরকম একটি ভ্রমনকেন্দ্রকে যখন রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবিগন আড়াল করতে চান, পর্যটকদের সেখানে যেতে নিরুৎসাহিত করেন এই অভিযোগে যে, এতে নাকি সেখানকার পাহাড়ীদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যবহত হয়, তখন এ নিয়ে কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা লিখতে হয়। তো দেখা যাক আমরা সেখানে কতটা ব্যহত করেছি তাদের জীবনযাত্রা!
গাড়ি যখন ছুটে চলছিল একের পর এক চেকপোস্ট আর উঁচু নিচু পাহাড়ী রাস্তা পেছনে ফেলে তখন উপজাতি তরুন-তরুনী,শিশু হাত নেড়ে অভিবাদন জানাচ্ছিল! এ সম্প্রতি এমনি এমনি গড়ে ওঠেনি। যত দর্শনার্থী যাবে ততই যোগাযোগ বাড়বে আর যোগাযোগই হল উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দর্শনার্থীদের ঘিরে তৈরী হয়েছে বাজার-ব্যবসা। বলাই বাহুল্য, এর সুফল আমাদের পাহাড়ী ভাইরা পাচ্ছেন। সেখানে পৌঁছে থাকার কটেজ আর হোটেলগুলো দেখে আমার এ ধারনা আরো বদ্ধমূল হয়। এই অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে তাদের বঞ্চিত করে, তাদের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে, তাদের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে কারা টাকার বিনিময়ে ধর্মান্তরিত করে পাহাড়ে অশান্তির বীজ বপন করতে চাইছে তা আমরা বুঝি। কথা হয় জনৈক চাকমা যুবক (সন্ত্রাসীদের থেকে তাকে সুরক্ষিত রাখতে নাম প্রকাশ করলাম না) এর সাথে। একটি “চান্দের গাড়ির” হেলপার এবং গাড়িটি তারই বাবার। তার সাথে কথা বলে স্থানীয়দের অবস্থা জানতে চাইলাম। এ চাকমা শ্রমিক যুবকের মতে, সেনাবাহিনী না থাকলে তাদের প্রচুর টাকা চাঁদা দিতে হবে স্থানীয় গ্রুপগুলোকে। তার ভাষায় “সেনাবাহিনী বসে বসে খায় না, অনেক কাজ করে, কিন্ত সবাই ভাবে সেনাবাহিনী এখানে বসে বসে খায়!”। দেশবিদেশের ট্যুরিস্ট এখানে আসা উচিৎ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পড়া রিপেলের উত্তরটি আমাকে বিস্মিত হতে বাধ্য করে! “এখানে এসে দেখুক সবাই, বাংলাদেশ কত সুন্দর”।
কংলাক পাহাড়ের কোলে একটা টং দোকান আছে জারা লুসাইর(৪০)। তার মতে, ট্যুরিস্টরা তার দোকানে কোন ঝামেলা করে না। দুই একজন স্থানীয় ড্রাইভার খাবার খেয়ে বিল না দিয়ে চলে যান। তাকে জিজ্ঞেস করলাম এখানে সমস্যা কি? সে বলে এখানে ভাল স্কুল-কলেজ নাই। সম্ভবত একটি প্রাইমারি আছে। ট্যুরিস্ট যদি না যায় তাহলে এসকল সমস্যা সরকারের সামনে আসবে কি করে? সেনাবাহিনী তাদের চেক পোস্টের সামনে নির্দেশনা সংবলিত সাইনবোর্ড রেখেছে। ট্যুরিস্টদের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আছে তা নিয়েও সেনাবাহিনী এভাবে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি এই লেখাটি যখন লিখছি স্থানীয় সরস্বতি পূজায় পাহাড়ীর পাশাপাশি বিভিন্ন বাংলা গানের পরিবেশনা ও নাচও দেখতে পেলাম। সংস্কৃতির এ এক অসাধারন মিলন। একই সাথে তারা বাংলায় মিশছে, অপরদিকে নিজস্ব স্বকীয়তাকে তারা বিসর্জন দেয়নি। ট্যুরিস্ট যদি না যায় তো এ মিলন সম্ভব কি?
পাহাড়িদের নিজস্ব উৎপাদিত ফল সুলভ মূল্যে বিক্রয় করতে দেখা গেল বিভিন্ন স্পটে । তাদের ডাব,পেঁপের গুন বর্ণনা না করে আমি বলতে চাই এতে তারা অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছে আর এটা একটা বড় বিষয়। মাথা ব্যথার জন্য মাথা কাঁটা আর কিছু তথাকথিত অভিযোগের জন্য সেখানে ভ্রমনে যেত তাই সাজেক যেতে নিরুৎসাহিত নয়, উৎসাহিত করা জরুরী। তাদের মূলধারার সাথে আনতে হবে। তাদের যদি আমরা আদিম পরিবেশে ছেড়ে দেই তাহলে উন্নতি অসম্ভব এবং অশান্তি অবশ্যসম্ভাবী। আর এক শ্রমিক চাকমা ভাইয়ের মুখের কখা থেকে এটা স্পষ্ট যে, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের কবল থেকে সাধারণ ও শান্তিপ্রিয় পাহাড়ী ভাই-বোনদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য অবশ্যই পাহাড়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবস্থান করা প্রয়োজন।
আর্টিকেলটি নিয়ে মন্তব্য করুন