রাজনীতিতে ‘আমার জনগণ’, ‘আমার বাংলা’, ‘আমার মানুষ’ ইত্যাদি শব্দযুগল উচ্চারণ করে সমগ্র দেশকে, মানুষকে নিজের বা আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা এবং গুণ দুটিই বঙ্গবন্ধু দেখিয়েছেন । ইতিহাস, সাহিত্য, দেশ ভাষার প্রতি মমত্ববোধ, নির্লোভ, অসাম্প্রদায়িক মনন, ভবিষ্যতের রূপরেখা প্রণয়ন ইত্যাদির প্রায় সবকিছুই তিনি দেখিয়েছেন ১৭ মিনিট ২ সেকেন্ড দীর্ঘ বক্তৃতায় । একজন বক্তা সুন্দর সম্বোধনে তাঁর শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য শুরু করেন যা তিনি করেছেন – “ভায়েরা আমার ” দিয়ে । তারপর তিনি তাঁর এখানে আসার উদ্দেশ্য জনতার সামনে তুলে ধরেন , ব্যক্ত করেন আজকে এখানে উপস্থিত হবার কারণ । তারপর তিনি ইতিহাসের আলোকপাত করেন । শ্রোতাদের তিনি ২৩ বছরের বঞ্চনার ইতিহাস তুলে ধরেন। সমৃদ্ধ এক ভাষণের মধ্যে কি ছিলো না ?
প্রথমত, প্রতিপক্ষকেও সম্মান দেখিয়ে সম্বোধন করেছেন আপনি’ করে । তিনি বলেছেন “তাঁকে আমি বলেছিলাম জনাব ইয়াহিয়া খাঁন সাহেব, আপনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, দেখে যান কিভাবে আমার গরীবের উপরে, আমার বাংলার মানুষের বুকের উপর গুলি করা হয়েছে। কী করে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে, কী করে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, আপনি আসুন, দেখুন, বিচার করুন।
দ্বিতীয়ত, বঙ্গবন্ধুর ক্ষমতার লোভ ছিলো না। তিনি প্রধানমন্ত্রীত্ব নিয়ে একদমই ব্যতিব্যস্ত ছিলেন না বরং জনগণের ন্যায্য অধিকারের বিষয়ে ছিলেন আপোষহীন । তিনি বলেছেন -“আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না। আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই”। তৃতীয়ত তিনি ছিলেন আপামর জনসাধারণের। তিনি গরীবের বন্ধু ছিলেন। গরীবের কষ্টের কথাই বেশি চিন্তা করতেন তিনি । তাঁর ভাষণে তিনি বলেছেন – “গরীবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে, সেইজন্য সমস্ত অন্যান্য জিনিস গুলো আছে সেগুলোর হরতাল কাল থেকে চলবেনা- রিকসা-ঘোড়াগাড়ি চলবে, রেল চলবে, লঞ্চ চলবে- শুধু সেক্রেটারিয়েট, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, জর্জকোর্ট, সেমি গভর্নমেন্ট দপ্তরগুলো, ওয়াপদা কোনো কিছু চলবেনা।”
চতুর্থত, আত্নবিশ্বাসী ছিলেন বাঙালি জাতির শক্তি- ক্ষমতা নিয়ে। একবার জেগে উঠলে তারা জয় করবে শত বাধা। ভেতো বাঙালি জেগে উঠলে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না সেই কথা তিনি উল্লেখ করেছেন তাঁর ভাষণে । “সাত কোটি মানুষকে দাবাইয়া রাখতে পারবানা। আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দমাতে পারবে না।”
পঞ্চমত, অসাম্প্রদায়িক মননের কথা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি তার ভাষণে – “এই বাংলার হিন্দু-মুসলমান, বাঙালি-নন বাঙালি যারা আছে তারা আমাদের ভাই , তাঁদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের উপরে, আমাদের যেন বদনাম না হয় । তিনি ভাষণ শেষ করেন দেশের মানুষকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবেমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।
নতুন প্রজন্মের সবাইকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জানতে হবে, উপলব্ধি করতে হবে। বাংলাদেশের একজন নাগরিক যদি বঙ্গবন্ধুকে সঠিকভাবে বুঝতে পারেন তাহলে রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অনেক সংকট থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব।
লেখকঃ শিক্ষক, ডেভেলাপমেন্ট স্টাডিজ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
আর্টিকেলটি নিয়ে মন্তব্য করুন