প্রাচ্যনিউজ
  • বাংলাদেশ
  • প্রতিবেশি
  • মধ্যপ্রাচ্য
  • পূর্ব-পশ্চিম
  • রাজনীতি
  • মতামত
  • বিনোদন
  • অন্যান্য
    • আন্তর্জাতিক
    • আমেরিকা
    • আফ্রিকা
    • রাশিয়া
    • ইউরোপ
    • অষ্ট্রেলিয়া
    • ভারত
    • আফগানিস্তান
    • নেপাল
    • ভুটান
    • মায়ানমার
    • ল্যাটিন আমেরিকা
    • দূরপ্রাচ্য
    • ইতিহাস-ঐতিহ্য
    • দেশের পণ্য
    • খেলা
    • ক্রিকেট
    • ফুটবল
    • দেশীয় খেলা
    • পর্যটন
    • পার্বত্য বাংলা
    • দেশের পণ্য
    • প্রাকৃতিক সম্পদ
    • শিল্প-অর্থনীতি
    • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
    • সম্পাদকীয়
    • প্রবাসী
    • লাইফষ্টাইল
    • ক্যাম্পাস
    • প্রজন্ম
    • সাহিত্য
    • গল্প
    • কবিতা
    • নাটক ও চলচ্চিত্র
    • ধর্ম ও জীবন
    • ভিডিও
ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখান
ঢাকা     সোমবার, ৮ মার্চ ২০২১, ২৩ ফাল্গুন ১৪২৭, ২৩ রজব ১৪৪২
বেটা ভার্সন
প্রাচ্যনিউজ
  • বাংলাদেশ
  • প্রতিবেশি
  • মধ্যপ্রাচ্য
  • পূর্ব-পশ্চিম
  • রাজনীতি
  • মতামত
  • বিনোদন
  • অন্যান্য
    • আন্তর্জাতিক
    • আমেরিকা
    • আফ্রিকা
    • রাশিয়া
    • ইউরোপ
    • অষ্ট্রেলিয়া
    • ভারত
    • আফগানিস্তান
    • নেপাল
    • ভুটান
    • মায়ানমার
    • ল্যাটিন আমেরিকা
    • দূরপ্রাচ্য
    • ইতিহাস-ঐতিহ্য
    • দেশের পণ্য
    • খেলা
    • ক্রিকেট
    • ফুটবল
    • দেশীয় খেলা
    • পর্যটন
    • পার্বত্য বাংলা
    • দেশের পণ্য
    • প্রাকৃতিক সম্পদ
    • শিল্প-অর্থনীতি
    • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
    • সম্পাদকীয়
    • প্রবাসী
    • লাইফষ্টাইল
    • ক্যাম্পাস
    • প্রজন্ম
    • সাহিত্য
    • গল্প
    • কবিতা
    • নাটক ও চলচ্চিত্র
    • ধর্ম ও জীবন
    • ভিডিও
ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখান
প্রাচ্যনিউজ

সুন্দরবনের জানা-অজানা কথা

ফেব্রুয়ারী ১৬, ২০১৭
বিভাগ:  প্রাকৃতিক সম্পদ, বাংলাদেশ, হেডলাইন


তৌসিফ আহমেদ, অতিথি লেখক


সুন্দরবন। পৃথিবীর সবচাইতে বড় ম্যানগ্রোভ বন। আয়তনে প্রায় ১০,০০০ বর্গ কিঃমিঃ এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা এই বন বাংলাদেশ অংশে আছে ৬,০১৭ বর্গ কিঃমিঃ। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বাসভূমি ও পদে পদে বিপদের শিহরণ জাগানিয়া এই বনে বিপদ যে কোনদিক থেকে আসে তা বোঝা দুষ্কর। তাই বলে থেমে নেই এখানে মানুষের চলাচল। জীবন হাতের মুঠোয় করে এখানে আশেপাশের স্থানীয় অনেক মানুষই আছে জীবিকার তাগিদে। কেউ আসে কাঠ কাটতে, কেউ আসে মধু সংগ্রহ করতে, আবার কেউ আসে মাছ ধরতে। চারিদিক নজর রেখে সন্তর্পণে তারা পদচারণা করে বনের ভিতর।

সুন্দরবনে মানব-ইতিহাসের প্রথম যে নজির পাওয়া যায় সেটি প্রায় সতেরশ থেকে আঠারশ বছরের পুরাতন। বর্তমান ভারতের বাঘমারা ফরেস্ট ব্লকের কাছে একটি স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে যেটিকে প্রত্নতত্ত্ববিদরা দুইশ-তিনশ খ্রিস্টাব্দ সময়কালের নিদর্শন বলে মনে করছেন। স্থানীয়ভাবে সেটি চাঁদ সওদাগরের নগর নামে পরিচিত। মুঘল সালতানাতের সময়ে মুঘলেরা স্থানীয় জমিদারদের কাছে সুন্দরবনের অংশবিশেষ ইজারা দিতেন। সম্রাট আকবরের সময়ে অনেক পলাতক দাগী আসামীরা সুন্দরবনে এসে লুকিয়ে থাকত। এদের অনেকেই অসতর্কাবস্থায় বাঘ দ্বারা আক্রান্ত হত বলে জানা যায়। অনেকে বনের ভিতরে বাড়ি-ঘর বানিয়ে থাকা শুরু করে। কিন্তু পরবর্তীতে পর্তুগীজ জলদস্যুদের আক্রমণের শিকার হয় তারা। পর্তুগীজরা বহুদিন একচ্ছত্র আধিপত্য চালায় সুন্দরবন অঞ্চলে। পর্তুগীজরা এই অঞ্চলে থেকে জাহাজ, বজরা, নৌকাসহ বিভিন্ন ছোটবড় জলযান লুটপাট করত। সেই সাথে তারা অবৈধভাবে লবণ চোরাচালান করত এই অঞ্চল দিয়ে।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার সুবাদারী লাভ করার পর ১৭৬৩ সালে তৎকালীন সার্ভেয়র জেনারেল সুন্দরবন অঞ্চলের প্রথম ম্যাপ বানায়। সুন্দরবনের বনবিভাগ গঠন করা আরো প্রায় একশ বছর পরে ১৮৬০ সালে।  ১৮৬৯ সালে সমগ্র সুন্দরবনের রক্ষণাবেক্ষণের এখতিয়ার দেওয়া হয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টকে। ব্রিটিশ সরকারের করা ফরেস্ট অ্যাক্ট-১৯৬৫ এর ভিত্তিতে সুন্দরবনের একটই বৃহৎ অংশ রিজার্ভড ফরেস্ট হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৭৯ সালে সুন্দরবন এলাকাকে সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিভিসনের কাছ থেকে ছাড়িয়ে তৎকালীন বনবিভাগের কাছে হস্তান্তরসহ খুলনায় এর সদর-দপ্তর গঠন করা হয়।  ১৯৯৩-৯৮ সালে প্রথম সুন্দরবন ব্যবস্থাপনা আইন লেখা হয়। ১৯১১ সালের একটি সরকারী প্রতিবেদনে বলা হয় যে, হুগলি থেকে বাকেরগঞ্জ অর্থ্যাৎ হুগলি নদীর মুখ থেকে শুরু করে মেঘনা নদীর মুখ পর্যন্ত ১৬,৯০০ কিঃমিঃ অঞ্চল সুন্দরবনের অংশ বলে বিবেচিত হবে। এই বনকে ব্রিটিশ সরকার রিজার্ভ বন করতে চেয়েছিল যাতে মানুষের গমনাগমনের ফলে এই বনের কোন ক্ষতি না হয়। কিন্তু বদ্বীপের উপরে গড়ে ওঠা এই সুন্দরবনে ছিল জালের মত শাখা-প্রশাখা যুক্ত নদী। যার কারণে মানুষের এই বনে অবৈধ গমন কখনোই ঠেকানো যায় নি।

বন কেটে বাড়ি বানানো হয়েছে। ছবিটি আঁকানো হয় ১৮৩৯ সালে। আর্টিস্ট- ফ্রেডেরিক পিটার লেয়ারড।

সুন্দরবন সব সময়ই শ্বাপদসংকুল। কিন্তু সুন্দরবন একই সাথে প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ। তাই এখানকার লোকগাঁথাও গড়ে উঠেছে একটু ভিন্নভাবে। বনে বিপদ কোন মানুষের জাত দেখে আসে না। তাই স্থানীয় মানুষেরা বনের সমূহ বিপদ এড়াতে বনবিবি(একই সাথে মুসলমান পিরানি ও হিন্দু দেবী। তার সম্পর্কে বলা হয়, তিনি এক আবরকন্যা যিনি সুন্দরবনে নির্বাসনের জীবন বেছে নিয়েছিলেন। স্থানীয় লোকেরা তাকে বনের রক্ষাকর্ত্রী হিসেবে পূজা করে।), গাজি আউলিয়া, দক্ষিণ রায় নামক আঞ্চলিক দেবতার পূজা করে।

বনবিবি সুন্দরবনের প্রধানতম দেবী। স্থানীয়রা মনে করে যে বনবিবি না থাকলে সুন্দরবনে কখনোই মানুষের নিরাপদ প্রবেশাধিকার থাকত না। গাজি আউলিয়া আর দক্ষিণ রায় এরা যত না বেশি পৌরাণিক তারও থেকে বেশি কিংবদন্তি চরিত্র। ‘গাজি কালু চম্পাবতী’ পুঁথি ও ‘বনবিবির পাঁচালী’ পড়লে জানা যায় এদের কিংবদন্তির কথা। দক্ষিণ রায় সুন্দরবনের ব্যাঘ্র-দেবতা আর তার প্রতিপক্ষ ছিলেন গাজি সা’ব। কথিত আছে যে ব্যক্তি গাজি সা’বকে স্মরণ করে সুন্দরবনে প্রবেশ করে তবে তাকে বাঘ বা ব্যাঘ্র-দেবতা আক্রমণ করতে পারে না।

বনবিবি, দক্ষিণ রায় আর গাজি সা’বকে নিয়ে জনপ্রিয় কিছু আখ্যান প্রচলিত আছে সুন্দরবন অঞ্চলে। কথিত আছে, একবার দুখে নামক এক ছেলে সুন্দরবনে আসে মধু সংগ্রহ করতে। সঙ্গে আসে ধনে আর মানে নামক দুই বনিক। সেই রাতে ব্যাঘ্র-অপদেবতা দক্ষিণ রায় ধনে-মানেকে স্বপ্নে লোভ দেখায় যে একটা মানুষ বলি দেওয়ার জন্য। বলি দিলে ধনে-মানে প্রচুর মধু ও সম্পত্তির মালিক হতে পারবে। লোভী বনিক ধনে-মানে অগাধ বৈভবের লোভে দুখেকে বনে রেখে নৌকা নিয়ে কেটে পড়ে। এ সময় বনবিবিকে দুখে মনেপ্রাণে স্মরণ করতে থাকে। বনবিবি তৎক্ষণাৎ কুমির পাঠিয়ে দেন দুখেকে উদ্ধারের জন্য। বিপদগ্রস্থ দুখে কুমিরের পিঠে চড়ে নিরাপদে লোকালয়ে চলে আসে।

ব্যাঘ্র দেবতা দক্ষিণ রায়কে মানবাবস্থায় পরাজিত করেন গাজি আউলিয়া সা’ব। তিনি ইসলাম প্রচারহেতু এ অঞ্চলে আসেন। দক্ষিণ রায় ছিলেন যশোরের রাজা মুকুট রায়ের সেনাপতি। পরে তারা বন্ধু হয়ে যান ও মিলেমিশে সুন্দরবন অঞ্চল শাসন করতে থাকেন। এই দক্ষিণ রায় কিভাবে ব্যাঘ্র দেবতা হয়ে গেলেন সেটা একটা রহস্য!

এছাড়াও সুন্দরবনের আশেপাশের স্থানীয়রা কালু রায় (কুমির দেবতা), জ্বরাসুর (জ্বরনাশক দেবতা), নারায়ণী দেবী, মনসা দেবী, আটেশ্বর, ভাঙড় পীর, বিশালাক্ষী দেবী, বিবি মা (ওলা বিবি ও তার পাঁচ বোন), মানিক পীর সহ আরো অসংখ্য দেবদেবীর পূজা করে থাকে। লক্ষ্য করে দেখা যায় এ সকল পূজিত দেবদেবীরা কোন একক ধর্মীয় বিশ্বাসের নয়। স্থানীয় হিন্দু মুসলমান সকল ধর্মের লোকেরাই এদের উপর অগাধ ভক্তি ও ভালবাসা ধারণ করে। তারা বিশ্বাস করে এই সকল দেবদেবীরা যতক্ষণ তাদের পাশে আছেন ততক্ষণ এই ভয়াল বনে তাদের বিপদ অসম্ভব। এই বিশ্বাসকে সম্বল করেই তারা সুন্দরবনে প্রবেশ করে।

বনবিবির প্রতিমা। তার বামপাশে গাজি আউলিয়া। পায়ের কাছে ‘দুখে’ নামক বালক আর তার বামপাশে ব্যাঘ্রমূর্তি রূপে দক্ষিণ রায়।

সুন্দরবনের ইতিহাস ও লোককাহিনীর পর এবার নজর দেওয়া যাক সুন্দরবনের কিছু জীববৈচিত্র্যের দিকে।

সুন্দরবনই হচ্ছে বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের (Panthera tigris tigris)একমাত্র প্রাকৃতিক আবাসস্থল। পৃথিবীতে এমন রাজকীয় মেজাজের প্রাণী খুবই কম দেখা যায়। কিন্তু বনরাজ এখন তার আপন সাম্রাজ্যেই বিপন্নপ্রায়।

২০০৪ সালে কৃত ব্যাঘ্রশুমারির দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশের বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ছিল মাত্র চারশ চল্লিশটি। ২০০৫ সালের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে প্রথম ক্যামেরা-ট্র্যাপ জরিপ করা হয় বাঘ গণনার জন্য। এ জরিপ কর্মটি চলে ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত। সুন্দরবনের ব্যাঘ্রসংকুল ছ’টি জায়গায় ক্যামেরা বসানো হয়। এই জরিপে আনু্মানিক দুইশটি বাঘের সন্ধান পাওয়া যায়। আরেকটি জরিপ করা হয় বাঘিনীদের বিচরণ এলাকা নিয়ে। এ জরিপে দেখা যায় মূলত ১২-১৪ কিঃমিঃ এলাকা জুড়ে একটি করে বাঘিনী বিচরণ করছে। এ হিসেবে দেখা যায় বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলে প্রায় একশ পঞ্চাশটির মত বাঘিনী থাকতে পারে। (এরপর মনে হয় আর কোন ব্যাঘ্রশুমারি হয় নি বাংলাদেশে। কারণ অনেক খুঁজেও ব্যাঘ্র শুমারির কোন রেকর্ড পেলাম না কোথাও।) সে তুলনায় ভারতের অংশে বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ২০১০ সালে ছিল আনু্মানিক সতেরশ ছয়টি থেকে উনিশশ নয়টি। যেটি ২০১৪ সালে বেড়ে দাঁড়ায় আনুমানিক দুই হাজার দুইশ ছাব্বিশটি।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার। পৃথিবীর বৃহত্তম প্রজাতির বাঘ।

সুন্দরবনে যেমন ডাঙায় বাঘ থাকে তেমনি জলে বাস করে কুমির (Crocodylus porosus)। সুন্দরবনের কুমিরকে বলা হত এর জলভাগের ‘প্রহরী’। বাংলাদেশ অঞ্চলে সুন্দরবনে জলভাগের পরিমাণ এক হাজার আটশ তিহাত্তর বর্গ কিঃমিঃ। এর মধ্যে ছোট-বড় নদী ও খালের সংখ্যা সাড়ে চারশ’র মত। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্দরবনের আয়তন অনুযায়ী কুমির থাকার কথা ছয় থেকে সাত হাজার। সুন্দরবনে মার্শ ও এস্টুয়েরাইন নামক দুই প্রজাতির কুমির দেখতে পাওয়া যেত। ১৯৬৩ সালে মার্শ প্রজাতির কুমিরের বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৫ সালের কুমির জরিপ করে আইআরএম। ওদের রিপোর্ট অনুযায়ী এস্টুয়েরাইন প্রজাতির কুমির সংখ্যা ছিল আনুমানিক একশ পঞ্চাশ থেকে দুইশটি। ২০১৬ সালের জানুয়ারী মাসের ৩১ তারিখে জিপিএস পদ্ধতিতে কুমির জরিপ চালায় সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন ন্যাচারাল রিসোর্সেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ক্যারিন্যাম) ও বাংলাদেশ বনবিভাগের জরিপ বিভাগ। তাদের কৃত জরিপ অনুযায়ী কুমিরের সংখ্যা একশ বা তার কিছু বেশি। সব মিলিয়ে এই হচ্ছে বর্তমান অবস্থা আমাদের সুন্দরবনের জলভাগের প্রহরীদের।
সুন্দরবনের লোনাপানির কুমির (এস্টুয়েরাইন ক্রোকোডাইল)।

(সুন্দরবন নিয়ে লিখতে বসার আগে চিন্তা করছিলাম যে লিখতে গিয়ে একটু আধটু হতাশ হয়ে যাব হয়ত। কিন্তু আমাদের সুন্দরবনের লিজেন্ড প্রাণিদের এই অবস্থা দেখে আমি সত্যিই ভয়াবহ হতাশ!)

যাই হোক, আরেকটি প্রাণীর কথা না বললেই নয়। তার নাম হচ্ছে চিত্রা হরিণ(Axis Axis)। টানা টানা চোখ। বাদামী খয়েরি গায়ে ফোঁটা ফোঁটা সাদা দাগ রয়েছে। সুন্দরবনের এই বাসিন্দা ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্নপ্রান্তের বনে বিচরণ করতে দেখা যায়। সুন্দরবনের চিত্রা হরিণ কেওড়া, বাইন, গরান, কাঁকড়া প্রভৃতি গাছের পাতা, ছাল-বাকল খেয়ে জীবনধারণ করে। এই প্রাণীটি খুব ভালো পোষও মানে। চিত্রা হরিণের নির্দিষ্ট কোন প্রজনন ঋতু নেই, কিন্তু বর্ষাকালের প্রাক্কালে যখন তৃণভূমি প্রচুর ঘাসে ভরে যায় তখনই চিত্রা হরিণের প্রজননের প্রকৃষ্ট সময়।

বাংলাদেশের ১৯৭৪ ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-২ অনুযায়ী এই প্রাণী শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও আইনত দণ্ডণীয় অপরাধ। যদিও চিত্রা হরিণেরা যদিও সুন্দরবনে এখনো পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে টিকে আছে তথাপি বনের অভ্যন্তরে লুকিয়ে হরিণ নিধন চলছে ঠিকই। স্থানীয় পোচার ও ভূমিদস্যুরা রাতের আঁধারে হরিণের অভয়ারণ্য সুন্দরবনে প্রবেশ করে জাল পেতে হরিণ শিকার করছে। এই অবৈধ হরিণ হত্যা যদি বন্ধ না করা যায় তাহলে তাহলে এই প্রাণীটির বিলুপ্তি নিশ্চিত।

সুন্দরবনে চিত্রা হরিণের পাল।

আমাদের সুন্দরবনে আরেকটি আকর্ষণীয় প্রাণী বসবাস করে যদিও এখন তারও অস্তিত্ব বিলুপ্তপ্রায়। তার নাম ভোঁদড়। ভোঁদড়কে মোটামুটি উভচর প্রাণী বলা চলে। সুন্দরবনে ভোঁদড় আছে দুই ধরণের। ধাইর‍্যা আর বাদার ধাইর‍্যা। ধাইর‍্যা ভোঁদড় বলা হয় নখযুক্ত ভোঁদড়কে(Lutrogale perspicillata)। আর বাদার ধাইর‍্যা বলতে স্থানীয়রা বুঝায় নখহীন ভোঁদড় (Amblonyx cinereus)। (যদিও বাদার ধাইর‍্যার নখ থাকে। কিন্তু সেগুলো বেশি লম্বা হয় না বলে স্থানীয়রা সেটাকে ধর্তব্যের মধ্যে রাখে না।)

নখযুক্ত ভোঁদড়ের প্রথম পছন্দ মাছ। আর নখহীন ভোঁদড়ের প্রথম পছন্দ চিংড়ি, শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া ইত্যাদি। সুন্দরবনের আশেপাশের স্থানীয়রা ভোঁদড়কে পোষ মানায় ও মাছ শিকার করার কাজে ভোঁদড় ব্যবহার করে।

ভোঁদড়

সুন্দরবনের প্রাণীবৈচিত্র্য অর্ধেকের বেশি প্রাণী ও পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে আর বাকি অর্ধেকের অর্ধেক এখন বিলুপ্তির পথে।

গত একশ বছরে সুন্দরবনের বিলুপ্ত প্রাণীদের মধ্যে সুমাত্রান/জাভা একশৃঙ্গী গণ্ডার, বন্য মহিষ, বারশিঙ্গা হরিণ, বন্য শুকর, মায়া হরিণ, বাঘডাঁশ, কাঠা কচ্ছপ, সুন্দ্রী কচ্ছপ, শকুন, হাড়গিলা, সাদা পেঁচা, ময়াল সাপ, দৈত্যাকার বক, সারস, সামুদ্রিক ঈগল, নীলগাই, শুশুক, জলার হরিণ, সর্দার গুঁইসাই, মেছোবাঘ, সমুদ্র শসা, রক্তবর্ণের মেছো শামুক অন্যতম। এছাড়া নিয়ম ও নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বত্ত্বেও কার্যকরী ব্যবস্থা না থাকায় ইতিমধ্যে সুন্দরবন থেকে দুই প্রজাতির উভচর প্রাণী, চৌদ্দ প্রজাতির সরীসৃপ, পঁচিশ প্রজাতির পাখি ও পাঁচ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মূলত জলবায়ু পরিবর্তন আর চোরাশিকারির কারণে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের আজ এমন করুণ দুর্দশা।

সুন্দরবনকে বলা হয় ম্যানগ্রোভ বন। ম্যানগ্রোভ অর্থ সমুদ্র উপকূলবর্তী লোনা পানির উদ্ভিদরাজি। ম্যানগ্রোভ বাস্তুতন্ত্রে একশটিরও বেশি উদ্ভিদ জন্মায়। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় গঠিত বদ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত সুন্দরবন পৃথিবীর সবথেকে বড় ও বৈচিত্র্যপূর্ণ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। বর্তমানে আমাদের এই সুন্দরবনে কমপক্ষে আঠাশটি প্রজাতি সত্যিকারের ম্যানগ্রোভ। ম্যানগ্রোভ গাছে থাকে ঊর্ধ্বমুখী শ্বাসমূল। যা জোয়ারভাটার সময় গাছের শ্বসনের প্রক্রিয়া চালায়।

সুন্দরবনের উদ্ভিদ নিয়ে প্রথম জরিপ করেন ইংরেজ উদ্ভিদবিদ ডেভিড প্রেইন ১৯০৩ সালে। তিনি তার প্রকাশিত বই ‘বেঙ্গল প্লান্টস’ সালে বইতে তিনি সুন্দরবনের উদ্ভিদের দুইশ পঁয়তাল্লিশটি শ্রেণী ও তিনশ চৌত্রিশটি প্রজাতির উল্লেখ করেন। কিন্তু তারপর সুন্দরবনের উদ্ভিদজগতে বড়সড় পরিবর্তন আসে। অনেক উদ্ভিদ প্রজাতি হারিয়ে যায়। সুন্দরবনের প্রধানতম উদ্ভিদের মধ্যে সুন্দরী(Heritiera fomes), গরান(Ceriops decandra), গেওয়া(Excoecaria agallocha), কাঁকড়া গাছ, কেওড়া(Sonneratia apetala), ধুন্দল(Xylocarpus granatum), নলখাগড়া(Phragmites karka), গোলপাতা(Nypa fruticans), বেত(Calamus tenuis), শন (Imperata cylindrical) প্রভৃতি।

সুন্দরবনের নামকরণ করা হয় এ বনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরীগাছের নামানুসারে। এই বনে সুন্দরীগাছের আধিক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বনভূমিতে সুন্দরী গাছে পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। সুন্দরী গাছের কাঠ থেকে দামি দামি আসবাবপত্র তৈরী হয়। এ কাঠ অত্যন্ত মজবুত আর টেকশই। একারণে কাঠ চোরাচালানকারীরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন উপায়ে এই গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। একবার এক খবরে পড়েছিলাম যে, গোলপাতা কাটার নাম করে বনের ভিতরে ঢুকে কাঠশিকারীরা সুন্দরী সহ গেওয়া, গরান প্রভৃতি দামি দামি বৃক্ষ কেটে নৌকা বোঝাই করে তার উপরে গোলপাতা দিয়ে ঢেকে স্বচ্ছন্দে পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ইদানিং সুন্দরবন অঞ্চলে লবনাক্ততার পরিমাণ আরো বেড়ে যাওয়ায় সুন্দরী গাছ হুমকির মুখে পড়ে গেছে।

দিন যত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন তত প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে। ২০০৭ সালে সিডরের সময়ে সুন্দরবন ভয়ানক ক্ষতির মুখে পড়েছিল। ইউনেস্কোর রিপোর্ট অনুসারে এই সাইক্লোনে সুন্দরবনের প্রায় চল্লিশ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। এছাড়া বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্তে নিমির্তব্য রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনা সুন্দরবনের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হবে বলে বিভিন্ন প্রকৃতিবিদরা মনে করেন। তবে এ বিষয়ে সরকারের দাবি সুন্দরবনকে ক্ষতিগ্রস্ত না করেই বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হবে।

১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বলে ঘোষণা করে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী এই সুবিশাল ম্যানগ্রোভ বন আমাদের সকলের অত্যন্ত গর্বের একটি বিষয়। যদি আমাদের উদাসীনতার কারনে এই বন বিনষ্ট হয়ে যায় তবে সেটি আমাদের দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হবে। করণ সুন্দরবন বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্গ যা সহস্র বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষকে কেবল নিরাপত্তা ও বেঁচে থাকার অজস্র উপকরণ দিয়ে গেছে। এই বনের সুরক্ষায় সরকারের উচিত আরো সচেতন পদক্ষেপ নেওয়া। আমরা আমাদের সুরক্ষাকারী সুন্দরবনকে হারিয়ে যেতে দিতে পারি না।

লেখক: স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

ShareTweetSendSend
পরের সংবাদ

জাবির প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু ৯ মার্চ

আর্টিকেলটি নিয়ে মন্তব্য করুন

কোন কিছু খুঁজছেন?

ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখান

দেশের খবর

Plugin Install : Widget Tab Post needs JNews - View Counter to be installed
  • আলোচিত
  • মন্তব্যসমূহ
  • সর্বশেষ

এসো দু’হাজার একুশ

যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে গরীব মানুষের সংখ্যা

যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে গরীব মানুষের সংখ্যা

‘র‌্যাগ দেয়া’ আর ‘র‌্যাগ ডে পালন’ এক বিষয় নয়

‘র‌্যাগ দেয়া’ আর ‘র‌্যাগ ডে পালন’ এক বিষয় নয়

বিদ্যুৎ বিলের সমস্যা, সমাধান এলো ঘরে

বিদ্যুৎ বিলের সমস্যা, সমাধান এলো ঘরে

পুরনো সংবাদ

 ১২৩৪৫৬
৭৮৯১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১ 
  • স্যোশাল মিডিয়াতে ফলো করুন

© প্রাচ্যনিউজ ২০১৫ – ২০২০
সম্পাদক ও প্রকাশক : শেখ আদনান ফাহাদ ।
১৩৪২/২ পূর্ব শেওড়াপাড়া (৫ম তলা) | রানওয়ে রোড, কাফরুল, ঢাকা – ১২০৮ । ফোন : +৮৮০১৫৩৩৩৫৪৮২৭ (টেকনিক্যাল) |
ইমেইল: [email protected] (এডিটোরিয়াল), [email protected] (টেকনিক্যাল)

© ২০২০ প্রাচ্যনিউজ স্বত্ত্ব সংরক্ষিত- ওয়েবসাইট নির্মাণ কোডসপাজল

  • বিজ্ঞাপন
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখান
  • প্রথমপাতা
  • বাংলাদেশ
    • ক্যাম্পাস
    • ইতিহাস-ঐতিহ্য
    • প্রজন্ম
    • দেশের পণ্য
    • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
    • শিল্প-অর্থনীতি
  • প্রতিবেশি
    • ভারত
    • মায়ানমার
    • নেপাল
    • ভুটান
  • মধ্যপ্রাচ্য
  • আন্তর্জাতিক
    • পূর্ব-পশ্চিম
    • অষ্ট্রেলিয়া
    • আফগানিস্তান
    • আমেরিকা
    • আফ্রিকা
    • ইউরোপ
  • রাজনীতি
  • মুক্তমত
    • সম্পাদকীয়
  • বিনোদন
  • খেলা
    • ক্রিকেট
    • ফুটবল
    • দেশীয় খেলা

© ২০২০ প্রাচ্যনিউজ স্বত্ত্ব সংরক্ষিত- ওয়েবসাইট নির্মাণ কোডসপাজল