প্রাচ্যনিউজ
  • বাংলাদেশ
  • প্রতিবেশি
  • মধ্যপ্রাচ্য
  • পূর্ব-পশ্চিম
  • রাজনীতি
  • মতামত
  • বিনোদন
  • অন্যান্য
    • আন্তর্জাতিক
    • আমেরিকা
    • আফ্রিকা
    • রাশিয়া
    • ইউরোপ
    • অষ্ট্রেলিয়া
    • ভারত
    • আফগানিস্তান
    • নেপাল
    • ভুটান
    • মায়ানমার
    • ল্যাটিন আমেরিকা
    • দূরপ্রাচ্য
    • ইতিহাস-ঐতিহ্য
    • দেশের পণ্য
    • খেলা
    • ক্রিকেট
    • ফুটবল
    • দেশীয় খেলা
    • পর্যটন
    • পার্বত্য বাংলা
    • দেশের পণ্য
    • প্রাকৃতিক সম্পদ
    • শিল্প-অর্থনীতি
    • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
    • সম্পাদকীয়
    • প্রবাসী
    • লাইফষ্টাইল
    • ক্যাম্পাস
    • প্রজন্ম
    • সাহিত্য
    • গল্প
    • কবিতা
    • নাটক ও চলচ্চিত্র
    • ধর্ম ও জীবন
    • ভিডিও
ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখান
ঢাকা     শুক্রবার, ৫ মার্চ ২০২১, ২০ ফাল্গুন ১৪২৭, ২০ রজব ১৪৪২
বেটা ভার্সন
প্রাচ্যনিউজ
  • বাংলাদেশ
  • প্রতিবেশি
  • মধ্যপ্রাচ্য
  • পূর্ব-পশ্চিম
  • রাজনীতি
  • মতামত
  • বিনোদন
  • অন্যান্য
    • আন্তর্জাতিক
    • আমেরিকা
    • আফ্রিকা
    • রাশিয়া
    • ইউরোপ
    • অষ্ট্রেলিয়া
    • ভারত
    • আফগানিস্তান
    • নেপাল
    • ভুটান
    • মায়ানমার
    • ল্যাটিন আমেরিকা
    • দূরপ্রাচ্য
    • ইতিহাস-ঐতিহ্য
    • দেশের পণ্য
    • খেলা
    • ক্রিকেট
    • ফুটবল
    • দেশীয় খেলা
    • পর্যটন
    • পার্বত্য বাংলা
    • দেশের পণ্য
    • প্রাকৃতিক সম্পদ
    • শিল্প-অর্থনীতি
    • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
    • সম্পাদকীয়
    • প্রবাসী
    • লাইফষ্টাইল
    • ক্যাম্পাস
    • প্রজন্ম
    • সাহিত্য
    • গল্প
    • কবিতা
    • নাটক ও চলচ্চিত্র
    • ধর্ম ও জীবন
    • ভিডিও
ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখান
প্রাচ্যনিউজ

ভারতীয়দের প্রতি বাংলাদেশী জনগণের আন্তরিকতা

ফেব্রুয়ারী ৬, ২০১৭
বিভাগ:  ইতিহাস-ঐতিহ্য, গল্প, পর্যটন, প্রতিবেশি, বাংলাদেশ, ভারত, শিল্প-অর্থনীতি, হেডলাইন

অরিন্দম নাথঃ

প্রকাশের সাথে আমার দেখা বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জে ৷ এখন তার বয়স প্রথম পরিচয়ের দ্বিগুণ ৷ এবারের পরিচিতির কথা শোনাবার আগে প্রথমবারের পরিচিতির কথা শুনাই ৷ সেবার আমার সাথে করমচাঁদ ছিলেন ৷ প্রত্যুষ-বাবু আজ প্রয়াত ৷ তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো খুশি হতেন ৷ প্রকাশ সৎ পথে জীবিকা নির্বাহ করছে ৷

আমার তখন বেশ পরিচিতি হয়েছে ৷ একদিন সকালে এক ভদ্রমহিলার ফোন৷ অরুন্ধতী-নগর থেকে ৷ বৃদ্ধা মহিলা ৷ গলার সুরেই বুঝলাম ৷ বললেন, ‘মেঘনাদ-বাবু, আপনি কষ্টকরে একবার আমার বাড়িতে আসতে পারবেন ?’
মহিলার গলায় আভিজাত্যের সুর ৷ মানুষ বিপদে পড়লেই পুলিশের খবর করে ৷ বললাম, ‘এক্ষুনি আসতে হবে?’
– না, আপনি আপনার সময় করে আসুন ৷
– তাহলে আজ সন্ধ্যা ছ-টার দিকে আসছি ৷ আমার সাথে একজন অফিসারও আসবেন ৷

বাড়ির ঠিকানা জেনে নিলাম ৷ কথামত করমচাঁদ সহ গেলাম ভদ্রমহিলার বাড়ি ৷ সাদা পোশাকে ৷ শ্রীনগর মিলনচক্র, অরুন্ধতীনগর ৷ একটি গলির শেষ মাথায় বাড়ি ৷ লোডশেডিং ৷ বাড়ি খুঁজতে একটু কষ্ট হল ৷ আল্পনা দেবরায় ৷ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা ৷ বয়স ষাটের ঘরে ৷ ভদ্রমহিলা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ৷ সাথে বড়ো ছেলের বন্ধু প্রদীপ রায় ৷ আল্পনা দেবী সধবা ৷ বাড়ির কর্তা চা-বাগানে কাজ করতেন ৷ এখন অবসর জীবন কাটাচ্ছেন ৷ সন্ধে হলেই বেরিয়ে যান ৷ সমবয়সী একদল বুড়োর সাথে তাস খেলতে ৷ আজো অনুপস্থিত ৷ দুই ছেলে অজিত আর সুজিত ৷ দু-জনই বিবাহিত ৷ রাজ্যের বাইরে চাকুরী করে ৷ পূজার সময় পরিবার নিয়ে কিছুদিন থেকে যায় ৷ প্রদীপ-বাবু মাঝে-মধ্যে মেসো-মাসিমাকে দেখে যান ৷ কুঞ্জবন কোয়াটার্সে থাকেন ৷ বয়স ত্রিশের কোঠায় পূর্ত দপ্তরের বাস্তুকার ৷

চা-বিস্কুটের পালা শেষ হলে আল্পনাদেবী শুরু করলেন ৷ ঘটনা গত পরশু দিনের ৷ সন্ধ্যায় আজকের মত লোডশেডিং ৷ আল্পনা দেবী বাড়িতে একা ৷ পেছনের দরজায় তালা লাগিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ৷ পাশের বাড়িতে গল্প করতে ৷ সামনের দরজায় ভেতর থেকে ছিটকানি লাগানো ৷সামনের ঘরে একটি হ্যারিক্যান জ্বালানো ছিল ৷ আল্পনাদেবী বেরিয়ে যাওয়ার পর প্রদীপ-বাবু এসে হাজির ৷ এসে দেখেন সামনের দরজা বন্ধ ৷ ভেতরের ঘরে আলো দেখা যাচ্ছে ৷ প্রদীপ-বাবু মাসিমাকে ডাকলেন ৷ প্রথমে কোনও সাড়া-শব্দ নেই ৷ তারপর ভেতর থেকে আওয়াজ এলো, ‘যাচ্ছি ৷’ পুরুষ-কণ্ঠে ৷একটি ছেলে সামনের দরজা খুলে দিল ৷ হাতে হ্যারিকেন ৷ বয়স উনিশ-কুড়ি ৷ বলল, ‘মাসিমার কাছে এসেছেন?
বলেই প্রদীপ-বাবুর উত্তরের অপেক্ষা না করে বলল, ‘মাসিমা সামনের বাড়িতে গিয়েছেন ৷ আমি ডেকে দিচ্ছি ৷ আপনি বসুন ৷ আলোটা দিয়ে যাচ্ছি ৷’

প্রদীপ-বাবু সামনের ঘরে বসলেন ৷ ছেলেটি ঘরের ভেতরে চলে গেল ৷ বলল পেছনের দরজায় আমার চটি ৷ একটু পরেই সামনের গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল ৷ প্রদীপ-বাবু ছেলেটিকে আর দেখেন নি ৷ কথায় খুবই মিষ্টতা ৷ বিশুদ্ধ বাংলায় কথা বলে ৷ ভাবছিলেন, কই মাসিমা তো ওর সাথে আগে আমার পরিচয় করিয়ে দেন নি৷
প্রায় মিনিট দশেক অপেক্ষার পর আল্পনাদেবী একাই এলেন ৷ বললেন, ‘প্রদীপ তুমি কখন এলে ? তোমাকে কে ঘর খুলে দিল?’
প্রদীপ-বাবু হতবিহবল ৷ বললেন, ‘ছেলেটা’!
কার কথা বলছ ?
প্রদীপ-বাবু সবকথা খুলে বললেন ৷ বলতে বলতে কারেন্ট এসে হাজির ৷ ভিতরের ঘরে ঢুকে আল্পনাদেবীর চক্ষু ছানা-বড়া ৷ আলমিরা খোলা ৷ কাপড়-চোপড় ঘরের মধ্যে ছড়ানো ৷ আল্পনাদেবীর অলঙ্কারগুলি একটি পুটলিতে বাঁধা ৷ নিশি-কুটুম্বের আক্রমণ ৷প্রদীপবাবু এসে পড়ায় রক্ষা ৷ তবে একটি রূপার হার খোয়া গেছে ৷
কিন্তু প্রদীপ-বাবুর বিশ্বাস হচ্ছিল না ৷ তিনি তখনও কিছুটা হতবিহবল ৷ এমন ফুট-ফুটে ছেলেটা চোর ৷ প্রদীপ-বাবুর মন মানছিল না ৷ আমাদের কাছেও বিস্ময় গোপন রাখলেন না ৷ আল্পনাদেবী বললেন পাড়ার একটি ছেলের উপর আমার সন্দেহ হচ্ছে ৷ আমাদের ঠিক পরের গলিতেই বাড়ি ছিল ৷ ছেলেটি কলকাতার নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন স্কুলে পড়ত ৷ ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েই ফিরে আসে ৷ বাবা হঠাৎ মারা গেলেন ৷ ভদ্রলোক একটি বেসরকারি দপ্তরে চাকুরী করতেন ৷ একমাত্র ছেলে ৷ ভদ্রমহিলা কিছু পেনসন, গ্র্যাচুইটি পেলেন ৷ কলকাতা থেকে ফিরিয়ে এনে ছেলেকে বড়দোয়ালি স্কুলে ভর্তি করালেন ৷ প্রথম কিছুদিন বাড়ি-ঘরে ঝি-গিরি করে সংসার চালাতেন ৷ অথচ ছেলেটির জেঠুরা খুবই ধনী ৷ পরিবারটির প্রতি কোন সাহায্য করলেন না ৷ বছর ঘুরতেই উদ্ভিন্ন-যৌবনা বিধবা মহিলা বিয়ে করলেন ৷ নতুন বাবাকে ছেলেটি মেনে নিতে পারল না ৷ কুসঙ্গে পড়ল ৷ভদ্রমহিলা বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র ঘর বাঁধলেন ৷’

আল্পনাদেবী একটু থামলেন ৷ আমরা তন্ময় হয়ে শুনছিলাম ৷ আল্পনাদেবী আবার বলতে যাচ্ছিলেন ৷ করমচাঁদ বললেন, ‘আমি কইয়াম ৷’
বলেই নিজের খাতা খুললেন ৷ কয়েকটি পাতা উল্টে একটি পাতায় এসে থামলেন, ‘ছেলেটির নাম কি প্রকাশ চৌধুরী ? পিতা স্বর্গীয় পবন চৌধুরী ৷ বাড়ি শ্রীনগর মিলনচক্র, অরুন্ধতীনগর ৷’
এবার আল্পনাদেবীর অবাক হবার পালা ৷ ভদ্রমহিলার চোখে-মুখে করমচাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা উছলে পড়ল ৷ আল্পনাদেবীর সম্মতিসূচক ইশারার পর করমচাঁদ শুরু করলেন, ‘আমি প্রকাশ্যারে ধইরাম ৷ রাত্রিতে আই.জি.এম. হাসপাতালের গাছতলায় ঘুমায় ৷ দিনের বেলা একটা সাইকেল লইয়া আগরতলা শহরটা চোঁ চোঁ কইরা ঘুইরায় ৷ চুরির খাতায় নতুন নাম লিখাইছে ৷ ফর্টিওয়ানে দু-একবার চালান গেছে৷’

একটু থেমে করমচাঁদ বললেন, ‘ম্যাডাম যদি অনুমতি দেন তবে একটা গল্প বলি৷’
আমি বললাম, ‘প্রত্যুষ-বাবু, কই আপনার পি.আই.বি.-তে প্রকাশের খবর প্রকাশ হয় নি ?’
বলে আমি আল্পনাদেবীদের প্রত্যুষ ইনফরমেশন ব্যুরো বা পি.আই.বি.-র ব্যাখ্যা দিলাম ৷ সবাই একপ্রস্ত হাসলাম ৷ কিন্তু করমচাঁদ গম্ভীরভাবে বললেন, ‘একখান কথা আছে ৷ সংসার সুখের হয় রমণীর গুনে ৷ প্রকাশ্যাতো বাইচ্চা আছে ৷ এর মত একটা ভালো পুলা আগরতলা শহরে মারা গেইছল ৷ আমরা চাকুরীতে যোগ-দেয়া অবধি শুনছি ৷ তখন ত্রিপুরা বোর্ড হয় নাই ৷ ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ডের আন্ডারে পরীক্ষা হইত ৷ এখনতো ফাস্ট ডিভিশন, লেটারের রমরমা ৷ তখনকার দিনে হাতে গুইন্যা কয়েকটা ফাস্ট ডিভিশন আইত ৷ তবে তখনো আগরতলার নেতাজী, বোধজং, উমাকান্ত, ধর্মনগরের বি.বি.আই., উদয়পুরের রমেশ ভালো ফল করত ৷ ছেলেটা আগরতলার একটা স্কুল থাইক্যা পরীক্ষা দিছিল ৷ ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ডে সেকেন্ড হইছিল ৷ তারপর দিল্লী আই.আই.টি-তে ভর্তি হইল ৷ বাপডাও বড় চাকুরী করত ৷ মাও দেখতে অতীব সুন্দরী ৷ একটাই ছেলে ৷ এক বছরের মাথায় বাপডা অ্যাকসিডেন্টে না কেমনে যেন মারা গেল ৷ বাপের কাজ সাইরা পোলা গেল আবার কলেজও ৷ এ ধরনের পোলাপান বাড়ি-ঘরের খবর রাখে না ৷ এরা আরেক কিসিমের মানুষ ৷ ছেলেডার সাথে পড়ত আরেকটি ছেলে ৷ হের বন্ধু ৷ বাবা আর্মির অফিসার ৷ জব্বলপুর না কই যেন বাড়ি ৷ হিডা একদিন কইল কাকার বিয়া ৷ বাড়ি যাইব ৷বিয়া আসলে হইয়া গেছে ৷ কাকা বি.এস.এফ.-এ চাকুরী করে ৷

কাকাও অফিসার ৷ ত্রিপুরায় পোস্টিং ৷ ত্রিপুরার মাইয়া বিয়া কইরছে শুইন্যা বন্ধুর কাছ থেকে ছবি নিয়া দেখল ৷ দেখে কিতা হের মার ছবি ৷ বিয়ার কার্ডেও মার নাম লিখা আছে ৷ হেইদিনঅই ছেলেডা সুইসাইড করল ৷ হেই বডি আর ত্রিপুরায় আইল না ৷’

করমচাঁদের ভাব দেখে মনে হল সেদিনই কেইস নিয়ে তদন্ত শুরু করেন ৷ আমি তাকে বললাম প্রকাশকে ধরার ব্যবস্থা করুন ৷ সেদিন রাত্রেই করমচাঁদ প্রকাশকে পাকরাও করলেন ৷ আই.জি.মের চত্বর থেকে ৷ ওর গলায় আল্পনাদেবীর হারটি ঝুলছিল ৷ আল্পনাদেবী কোন মামলা দিলেন না ৷ হারটিও দাবি করলেন না ৷ তারপর প্রকাশ অনেকবার ধরা পড়েছে ৷ চুরি ডাকাতির কেসে ৷ জেলও খেটেছে ৷ কিন্তু কখনো তার কাছ থেকে বামাল উদ্ধার করতে পারিনি ৷ শেষ খবর প্রকাশ শিলচর চলে গেছে ৷ নতুন পরিচয়ে সংসার পেতেছে ৷ জনারণ্যে মিশে নূতন আঙ্গিকে হয়তো নিজেকে প্রকাশ করতে পেরেছে ৷ কিন্তু করমচাঁদের ডায়রি পড়ে আমি ভাবছিলাম ‘আরেক কিসিমের’ ছেলেটির কথা ৷ একটি পঙক্তি মনে এলো :

‘ রাতের সব তারাই আছে
দিনের আলোর গভীরে ৷’

রোদ্দুরের গভীরে প্রবেশ দরকার ৷ আমি একটি ভালো দূরবীনের সন্ধানে আছি৷

উপরের এই অংশটুকু করমচাঁদের ডায়রি থেকে ধার করা ৷ প্রকাশ বাংলাদেশে আছে আমার ধারনা ছিল না ৷ জুন, ২০১৫ সাল ৷ সরকারী কাজে বাংলাদেশ গিয়েছি ৷ দিন কয়েকের জন্য ৷ একটি দলের সাথে ৷ সুযোগ এসেছে পূব থেকে পশ্চিম বাংলাদেশের বুক চিরে বেরিয়ে যাওয়ার ৷ বাংলাদেশীদের আতিথেয়তা সর্বজনবিদিত ৷ আই.এস.ও. কিংবা যেকোনো মাপকাঠিতেই সেরা ৷ তাই তার বর্ণনায় যাচ্ছি না ৷ তখন সকাল ৷ আখাউড়া থেকে ঘণ্টা-দেড়েক চলার পর আমরা থামলাম কিশোরগঞ্জে ৷ আগে ছিল ময়মনসিংহের অংশ ৷ এখন পৃথক জিলা ৷ একজন কর্মকর্তা জানালেন নীরদ চন্দ্র চৌধুরীর জন্মস্থান ৷ এখান থেকে একটি রাস্তা চলে গেছে সিলেটের দিকে ৷ আমি তাই একমনে ভাবছিলাম সিলেটের কৃতি সন্তান শ্রী-গৌরাঙ্গ, শাহজালাল, হাসুন রাজাদের কথা ৷ তাঁদের ভাবের কথা ৷ তাঁদের দর্শনের কথা ৷যন্ত্রের মত চলছিলাম দলের পিছু পিছু রেস্টুরেন্টে ৷ সুন্দর ভোজনালয় ৷ বয়রা বেশ কেতা-দূরস্থ ৷ একই রকম পোষাকে সজ্জিত ৷ চা-নাস্তা সবার আগেই সারলাম ৷ ভাবলাম, বেরিয়ে এসে চার-পাশটা ভালো করে দেখব ৷ বেরুবার মুখে একটি বয় বলল, ‘স্যার সেলাম ওয়ালি-কুম, ভালো আছেন ?’

চেহারা দেখে একটু খটকা লাগল ৷ বললাম, ‘তোমার নাম কি?’

প্রকাশ চৌধুরী ৷চৌধুরী উপাধি হিন্দু এবং মুসলমান দুই অংশের লোকই ব্যবহার করে ৷ তাই মনে কিছু খটকা রয়েই গেল ৷ কিন্তু এর পর থেকে একবারের জন্যও প্রকাশের কথা ভুলতে পারছিলাম না ৷ কুশিনারাকে নিয়ে একটি কাহিনী পড়েছিলাম৷ নালন্দা থেকে পাটলিপুত্র-বৈশালী হয়ে কপিলাবস্তু যাবার পথে কুশিনারা৷ বুদ্ধদেব এখানে দেহ রাখেন ৷ কথিত আছে তখন অকালে শাল-বৃক্ষে ফুল এসেছিল ৷ কুশিনারা বর্তমান উত্তর প্রদেশে অবস্থিত ৷ অনেক বৌদ্ধ-ধর্মাবলম্বী জাপানি মেয়েরা এখানে আসে ৷ তরা বিশ্বাস করে এখানকার ছেলেদের শরীরে মিশে আছে তথাগতের রক্ত ৷ তাই অনেক সময়ই তারা স্থানীয় গাইডদের বিয়ে করে সংসার পাতে ৷ আমার দৃঢ় বিশ্বাস প্রকাশ সিলেটের কোন মেয়েকে বিয়ে করেছে ৷ আর তাই সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে ৷

আমি বাংলাদেশের প্রতিনিধিকে জিজ্ঞেস করলাম প্রকাশের মত বয়েরা কত বেতন পায় ৷ উত্তর এলো বাংলাদেশী টাকায় মাসিক দু-হাজার টাকা ৷ এর অতিরিক্ত, অনেক সময় কিছু টিপস পায় ৷ প্রায় একই রকম বেতন পায় ভিলেজ গার্ডেরা ৷ বাংলাদেশের সরকারি কিংবা বেসরকারি দুইটি ক্ষেত্রেই বেতন-ভাতা আমাদের তুলনায় অনেক কম ৷ কিন্তু লোকজন কর্মঠ ৷ পেট-মোটা লোক খুব কমই নজরে আসে ৷ তবে একটি শ্রেণী আছে খুবই ধনী ৷ বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়ির মালিক ৷ মনে হল তারাই সমাজের নীতি-নির্ধারক ৷ যদিও এই বৈষম্য আমাদের ভারতবর্ষেও আছে ৷ কিন্তু তফাৎটা চোখে পড়ার মত ৷

কয়েকটি জিনিস ভালো লাগল ৷ ভারতীয়দের প্রতি বাংলাদেশী জনগণের আন্তরিকতা ৷ ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটান নিয়ে বাণিজ্যিক ক্ষেত্র গড়ার স্বপ্ন ৷ বনায়নের প্রতি যত্ন ৷ আগরতলা থেকে কলিকাতার দূরত্ব ৫১৩ কিলোমিটার ৷ এর মধ্যে আছে বেনাপোল-পেট্রপোল থেকে কলিকাতা পর্যন্ত ৮৪ কিলোমিটার দূরত্ব ৷ দু`পাশে সাড়ি দিয়ে আম,জাম,কাঁঠাল ইত্যাদি ফল-পসারির গাছ ৷ অনেক জায়গায় রাস্তা থেকে অনেকটা দূর অবধি ৷ তারপর দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ ৷ রাস্তা খুবই ভালো ৷ শুধুমাত্র আখাউড়া থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অবধি রাস্তা অল্প সরু ৷ মধ্যে পদ্মা পারাপরের জন্য ঘণ্টা খানেক সময় লাগে ৷ আমি শচীন কর্তার ‘পদ্মার ঢেউ’ দেখতে পাইনি ৷ পদ্মা আমার কাছে স্নিগ্ধ রূপে এসেছে ৷ আমার কাছে উজাড় করে দিয়েছে তার জ্যোৎস্না রাতের মাধুর্য ৷ এইটুকু বাদ দিলে বাংলাদেশের বুক-চিরে পূবে-পশ্চিমে ভ্রমণ অন্ত-বিহীন মনে হয় ৷ এই সফর পূর্ণ করতে কেন প্রায় পুরো দিন লেগে যায় সেটা আমার কাছে বিশাল গোলক ধাঁধা ৷

ফিরতি পথে আবার গেলাম কিশোরগঞ্জের সেই রেস্তোরায় ৷ এবার রাত্রিতে ৷ আবার প্রকাশের সাথে দেখা ৷ ঢুকার মুখেই ৷ সে বলল, ‘স্যার সেলাম ওয়ালি-কুম, ভালো আছেন ?’
আমি অভিবাদন গ্রহণ করলাম ৷ ভাবলাম ওকে কিছু টিপস দেব ৷ ওর পরিবার সম্পর্কে জানব ৷ কিন্তু সেই মুহূর্তে প্রাকৃতিক ডাকের তাড়া ছিল ৷ টয়লেট সেরে এসে দেখি প্রকাশ হাওয়া ৷ অন্য বয়েরাও প্রকাশ কোথায় গেছে সদুত্তর দিতে পারল না ৷ আবারও একবার রবিঠাকুরকে স্মরণ করলাম:

‘ রাতের সব তারাই আছে
দিনের আলোর গভীরে ৷’

পঙক্তিটি তাঁর ‘হঠাৎ দেখা’ কবিতা থেকে নেওয়া ৷ কবি সে-যাত্রা তাঁর প্রেমিকাকে রেল গাড়ির কামরায় অল্পক্ষণের জন্য পেয়েছিলেন ৷ আর এই অন্তবিহীন পথে প্রকাশকে আমি দুবারের জন্য পেলাম ৷ আমি কবির চেয়ে ভাগ্যবান ৷

লেখকঃ ভারতীয় পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও জনপ্রিয় সাহিত্যিক

বিষয়সমূহ: বাংলাদেশভারতসীমান্ত
ShareTweetSendSend
পরের সংবাদ

নদীর পাড়ে আনন্দঘন বনভোজনঃ ডিরেক্টরস গিল্ডের জয় হোক

আর্টিকেলটি নিয়ে মন্তব্য করুন

কোন কিছু খুঁজছেন?

ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখান

দেশের খবর

Plugin Install : Widget Tab Post needs JNews - View Counter to be installed
  • আলোচিত
  • মন্তব্যসমূহ
  • সর্বশেষ

এসো দু’হাজার একুশ

যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে গরীব মানুষের সংখ্যা

যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে গরীব মানুষের সংখ্যা

‘র‌্যাগ দেয়া’ আর ‘র‌্যাগ ডে পালন’ এক বিষয় নয়

‘র‌্যাগ দেয়া’ আর ‘র‌্যাগ ডে পালন’ এক বিষয় নয়

বিদ্যুৎ বিলের সমস্যা, সমাধান এলো ঘরে

বিদ্যুৎ বিলের সমস্যা, সমাধান এলো ঘরে

পুরনো সংবাদ

 ১২৩৪৫৬
৭৮৯১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১ 
  • স্যোশাল মিডিয়াতে ফলো করুন

© প্রাচ্যনিউজ ২০১৫ – ২০২০
সম্পাদক ও প্রকাশক : শেখ আদনান ফাহাদ ।
১৩৪২/২ পূর্ব শেওড়াপাড়া (৫ম তলা) | রানওয়ে রোড, কাফরুল, ঢাকা – ১২০৮ । ফোন : +৮৮০১৫৩৩৩৫৪৮২৭ (টেকনিক্যাল) |
ইমেইল: [email protected] (এডিটোরিয়াল), [email protected] (টেকনিক্যাল)

© ২০২০ প্রাচ্যনিউজ স্বত্ত্ব সংরক্ষিত- ওয়েবসাইট নির্মাণ কোডসপাজল

  • বিজ্ঞাপন
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখান
  • প্রথমপাতা
  • বাংলাদেশ
    • ক্যাম্পাস
    • ইতিহাস-ঐতিহ্য
    • প্রজন্ম
    • দেশের পণ্য
    • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
    • শিল্প-অর্থনীতি
  • প্রতিবেশি
    • ভারত
    • মায়ানমার
    • নেপাল
    • ভুটান
  • মধ্যপ্রাচ্য
  • আন্তর্জাতিক
    • পূর্ব-পশ্চিম
    • অষ্ট্রেলিয়া
    • আফগানিস্তান
    • আমেরিকা
    • আফ্রিকা
    • ইউরোপ
  • রাজনীতি
  • মুক্তমত
    • সম্পাদকীয়
  • বিনোদন
  • খেলা
    • ক্রিকেট
    • ফুটবল
    • দেশীয় খেলা

© ২০২০ প্রাচ্যনিউজ স্বত্ত্ব সংরক্ষিত- ওয়েবসাইট নির্মাণ কোডসপাজল